Lutfor Hasan

Lutfor Hasan
Posted 1 year ago

তুলসী চক্রবর্তী প্রসঙ্গে সত্যজিৎ রায় বলেছিলেন ‘তিনি যদি যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করতেন, তবে অভিনয়ে অস্কার পেতেন’। ‘সাড়ে চুয়াত্তুর’ সিনেমা যতবার দেখেছি, ততবার তো দেখেছি তুলসী চক্রবর্তীর জন্যই। তো, আমাদের দেশের একজন অভিনেতাকে আমার এত বড় মনে হয়, অনেক বড়। তিনি আমিরুল হক চৌধুরী। তুলসী চক্রবর্তী সম্পর্কে যেমন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় আফসোস করে বলেছিলেন ‘কমেডি অভিনয় দেখে কেউ তাকে কমেডিয়ান ভাবলে বড় অন্যায় হবে। আমাদের সিনেমায় খাঁটি অভিনেতা হিসেবে তুলসী চক্রবর্তী খুব গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় থাকবেন’। ঠিক এই কথাটা মনে পড়ে যায় অভিনেতা আমিরুল হক চৌধুরীর বেলাতেও। বৃন্দাবন দাসের রচনায় বিভিন্ন নাটকে আমরা তাকে যেভাবে দেখি, তাতে কেউ কেউ তাকে কমেডি অভিনেতা হিসেবে ভুল করেন। আদতে ওটা অভিনয়ের প্রকৃত অংশ। ওটা কোনও ভাঁড়ামি নয়।
মোস্তফা সরয়ার ফারুকী নির্মিত ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ চলচ্চিত্রে তার সেই অভিনয় অনেক আগে দেখেছিলাম, এখনও স্পষ্ট মনে আছে, কী অসামান্য তার দখল! তবে বৃন্দাবন দাসের রচনায় সালাহউদ্দিন লাভলুর ‘হাড়কিপটে’ নাটকে তার অভিনয় বাংলা নাটকের গুণী অভিনেতাদের সেরা অভিনয়ের একটা মাইল ফলক হয়েই থাকবে। বাংলাদেশের অভিনয় শিল্পের দুই বিস্ময় প্রতিভা চঞ্চল চৌধুরী এবং মোশাররফ করিমের সঙ্গে ভাত খেতে বসে সেই যে আমীরুল হক চৌধুরীর অভিনয়, তা কি এই দেশের দর্শকেরা কোনোদিন ভুলতে পারবে?
২০১৮ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার সিনেটর ব্রেক শেরম্যান তাঁর হলিউড অফিসে ডেকে নেন আমিরুল হক চৌধুরীকে। তাঁর সব নাট্য কর্মকাণ্ড মনিটরিং করে তিনি পুরস্কারটি দেন। পুরস্কারটি পেয়ে অবাক হয়েছিলেন আমিরুল হক। দেশের এক জাতীয় দৈনিকের এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ ব্যাপারে বলেন ‘আমি কোনো সিন্ডিকেটের সদস্য না হওয়ায় এই অর্জন সেভাবে দেশে প্রকাশ পায়নি’।
তিনি অভিনেতা না হলে কী হতেন? জানা যায়, আমিরুল হক চৌধুরী দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে ঈশ্বরদী কলেজে পড়ার সময় ছাত্রসংসদের ভিপি ছিলেন। উনসত্তরের গণ-আন্দোলনের সময় ক্যাপ্টেন মনসুর আলী আমিরুল হককে পাকশীতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বানিয়েছিলেন। আমিরুল হক ৭০-এর নির্বাচনে সর্বকনিষ্ঠ এমপি হবার সুযোগ পেয়েছিলেন, কিন্ত নাট্যকলাতে অধিক আগ্রহ থাকায় তিনি রাজনীতিতে পা বাড়াননি। এই দেশের একজন জাতীয় নেতায় পরিণত হবার সব সুযোগ হাতের মুঠোয় থাকতেও তিনি বেছে নিয়েছিলেন অভিনয়কেই।
এই লেখাটা কেন লিখলাম? কিছুদিন ধরেই লক্ষ্য করছি, এদেশের সর্বকালের সেরা অভিনেতা বলা হচ্ছে এটিএম শামসুজ্জামান কিংবা হুমায়ূন ফরীদিকে। অথচ এই দেশেরই এক বলিষ্ঠ অভিনেতার নাম গোলাম মুস্তাফা, আরেক বলিষ্ঠ অভিনেতা খলিল। আলী যাকের কিংবা আসাদুজ্জামান নূর। সালেহ আহমেদকে ভুলে গেলে চলবে? এই যুগে মোশাররফ করিম এবং চঞ্চল চৌধুরী। আছেন ফজলুর রহমান বাবু কিংবা শতাব্দী ওয়াদুদ। আছেন আহমেদ রুবেল অথবা আজাদ আবুল কালাম। এককভাবে কাউকে সেরা বলাটা সম্ভবত ঠিক না। ওটা অতি আবেগ। কাউকে সেরা বলে দিলে, আরও যারা সেরার কাতারে, তাদের অবস্থান দুর্বল না হলেও প্রজন্মের একাংশ সেটাই চর্চা শুরু করে এবং তা প্রতিষ্ঠা পায়, আর আড়ালে চলে যায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ নাম। যেমন এক জ্বলজ্বলে নাম আমিরুল হক চৌধুরী। এই গুণী অভিনেতার জন্য প্রার্থনা, তিনি যেন সুস্থ থাকেন। আমাদেরকে আরও অনেক সিনেমায় বা নাটকে দারুণ অভিনয় দিয়ে সমৃদ্ধ করেন।

#লুৎফর_হাসান
আট জুন, তেইশ।
পান্থপথ, ঢাকা।

41 - 4

Lutfor Hasan
Posted 1 year ago

আমি একবার দক্ষিণ ভারতের কোনার্ক সান টেম্পলে গিয়েছিলাম। যেতে যেতে পথের এক পাশে দেখলাম পুরোটাই সবুজ বন। আরেক পাশে তো বঙ্গোপসাগর। তো, যেতে যেতে এক সবুজ নদীর দেখা পাই। নদীটির নাম ননাই নদী। নদীর জল এমন ঘন সবুজ কেন? সবুজ মানে আমাদের গুলশান লেকের রঙ করা সবুজ না। খাঁটি সবুজ। শ্যাওলা পড়ে অমন সবুজ হয়ে গেছে। এমন স্নিগ্ধ নদী, অথচ সেই নদীর উপর কোনও পর্যটকের কিংবা স্থানীয় কারো দাপাদাপি নেই।
আমার সঙ্গে ছিল আমার বন্ধু নিরঞ্জন মহাপাত্র। ওর বাড়ি অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীকাকুলামে। আমি যাচ্ছিলাম ওর বাড়িতেই। ওর সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব কলকাতা থেকে ভুবেনশ্বর যাবার পথে। নিরঞ্জন আমাকে শোনালো এই নদীর গল্প। বলল ‘এই অঞ্চলটা আমাদের দেবতা জগন্নাথ দেবের বড়ভাই বলরাম, বোন সুভদ্রার স্মৃতি বিজড়িত। হাজার হাজার বছর ধরে সনাতন ধর্মের মানুষেরা এই অঞ্চলকে বিশেষভাবে পবিত্র মনে করে। ফলে এখানে কেউ গাছ কাটে না, এইসব প্রাচীন নদীর জল কেউ অপবিত্র করে না’। আমি আর নিরঞ্জন গাড়ি থামিয়ে সেদিন এই নদীর ধারে এক বুড়ো সেগুন গাছের নিচে বসেছিলাম অনেকক্ষণ। সিগারেটের তৃষ্ণা পেলেও আমি আর সিগারেট খাইনি।
গত ঈদে গ্রামে গেলাম যখন, যেতে যেতে দেখলাম নতুন পাকা রাস্তা। রাস্তার দুধারের সেই পুরনো বড় বড় গাছের একটিরও চিহ্ন নেই। আমার মনে পড়ল এক যুগ আগের সেই নিরঞ্জনের কথা। কেন মনে পড়লো? শুনুন। থানা শহর থেকে আমাদের গ্রামে যাবার মাঝখানে কালি ঠাকুরের পুস্কিনি আছে। অনেক প্রাচীন। সেই পুকুরের গা ঘেঁষে দুটো গাছ ছিল। একটি পাকুড় গাছ, অন্যটি বটগাছ। কোনও এক মনিষী এই অঞ্চলে বেড়াতে এসে জানিয়ে যান ‘এই দুই গাছের মধ্যে বিয়ে দিতে হবে। বিয়ে না দিলে অভিশাপ নেমে আসবে এই এলাকায়’। তারপর সেই দুই গাছের মধ্যে বিয়ে দেয়া হয়। সে এক বিরাট উৎসব লেগে যায়। দুই গাছের বিয়ের পর কেউ গাছের ডাল ভাঙত না। পাতা ছিঁড়ত না। আমরা যখন এই গাছের সামনে দিয়ে যেতাম, এই গাছের ছায়ায় মন ভালো হয়ে যেত। অনেক পরে জানা গেলো, সেই মনিষী ছিলেন দূরদর্শী। তিনি আঁচ করেছিলেন, এই রাস্তার ধারের এই দুটো গাছকে বাঁচানো যাবে না। রাস্তার কাজ শুরু হলেই এর সর্বনাশ হবে। তাই তিনি এমন আদেশ দিয়েছিলেন। সত্য ফাঁস হবার পর এখন কেবল পাকুড় গাছটি অস্থায়ীভাবে টিকে আছে। বটগাছটি আর নেই।
আমাদের গ্রাম প্রাচীন ঐতিহ্যের গ্রাম। জানা যায়, ছোটবেলায় নেত্রকোনায় বেড়াতে এসে জয়া ভাদুড়ি এসেছিলেন আমাদের গ্রামের তরুণীকান্ত ভাদুড়িদের বাড়িতে। ভাদুড়ি পাড়া শুধু নামেই আছে। ঐতিহ্য মৃত। এই গ্রামে রূপসী এক নদী ছিল ঝিনাই। সেই ঝিনাই মরে গেছে। ধ্বংস হয়েছে নদীর ধারের প্রকাণ্ড সব সবুজ বৃক্ষ। আমাদের প্রাইমারি স্কুলের সাথে ছিল বিস্তৃত জায়গা জুড়ে এক বিপুল বটগাছ। সেই বটগাছের রশি ধরে আমরা ঝিনাই নদীতে ঝুলে পড়তাম। আমাদের সেই গ্রাম এখন রাজস্থানের গ্রামের মতো ধূধূ। সবুজের চিহ্ন নেই। গ্রামটি দেশের অন্যতম সবুজ গ্রাম কেন ছিল? প্রাচীন আমলে জমিদারেরা একটি নিজস্ব দেবদারুর বন গড়ে তুলেছিলেন, এখনও আমাদের প্রায় সবার বাড়ির পেছনেই ছোটখাটো দেবদারুর জঙ্গল দেখা যায়। সেই সবুজ গ্রাম আজ কেবলই হাহাকার।
তো, বাংলাদেশের অনেক গ্রামেই যেভাবে গাছ কাটার মহোৎসব, সেই তুলনায় গাছ লাগানোর পক্ষে কেউ নেই। অথচ গরমে আমরা লোডশেডিংকেই দায়ী করি, মেয়রকে গালি দিই, কেউ নিজের জায়গা থেকে একবারও ভাবি না, কতবার কতজনকে গাছ না কাটার ব্যাপারে কথা বলেছি, কয়টি গাছ লাগিয়েছি আমাদের কারো মনে নেই। তো, গরমের অত্যাচার থামবে কী করে?

#লুৎফর_হাসান
#lutfor_hasan

31 - 1

Lutfor Hasan
Posted 1 year ago

ফেসবুকে লিখতে ভালো লাগে, লিখি। অনেকেই সেইসব লেখা চুরি করে। করুক। আমার যেটুকু মেধা, এটুকু তো একান্ত আমার। এটা তো আর নিতে পারবে না। তবে, কষ্ট হয় যেসব লেখা মোটামুটি পাঠকপ্রিয় হয়, সেগুলো কেউ কেউ নিজের নামে চালিয়ে দেয়। পোস্ট করে। সেখানে লোকজন কমেন্ট করে 'দারুণ লিখেছো' আর তাতে খুশি হয়ে পোস্টদাতা রিপ্লাই দেয় 'পাশে থাকবেন, আরও ভালো লিখতে চাই'।

এই চোরদের মধ্যে এক চোর পেলাম, কয়েক বছর আগে আমার একটা লিরিক 'একটি পাখির গান শোনাব, উদাস দুপুর বেলা' মেরে দিয়ে মিউজিক ভিডিও করে জনপ্রিয় এক লেবেলের ইউটিউব চ্যানেলে ছেড়ে দিয়েছে। ভাবলাম মামলা করে দিই, আবার ভাবলাম এত দৌড়ঝাঁপ কে করবে? মারুক। একটা লিরিকই তো মেরেছে।
এক মোটামুটি ব্যস্ত নাট্য পরিচালক একদিন আমার এক লেখা পোস্ট করলো ক্রেডিট ছাড়া। লেখাটা অনেকের পরিচিত বলে সেখানে কমেন্টে আমাকে অনেকেই মেনশন করায়, আমি শুধু লিখলাম 'এভাবে মেরে দিলেন?' সে আমাকে আজেবাজে কথা শুনিয়ে ব্লক করে দিলো।

গত পরশু একজন একটা টিকটকের লিঙ্ক দিলো, ফেসবুক স্টোরি এবং রিলসেও ভয়াবহ জনপ্রিয় সেই ভিডিও। সিগারেট নিয়ে আমার একটা মজার লেখা ছিল। এক ছেলে হুবহু কথাগুলো ভিডিও করে ছেড়ে দিয়েছে। কোটি কোটি ভিউ। এ যে আমার লেখা, কীভাবে এর সমাধান করব?

পনেরো দিন আগেই এক ছেলে এক কবিতা লিখেছে, কবিতার নিচে লেখা জিন্দাবাজার, সিলেট। এক ভাই মেনশন দিলো। দেখলাম সে প্রচুর জনপ্রিয় হয়েছে। আমাদের অনেকের লেখাই মেরে দিয়ে সে জনপ্রিয়। কী করার আছে? নক করেছি, ব্লক করেছে।

তাহলে কি আর লিখব না? না লিখে তো থাকতে পারি না।

#লুৎফর_হাসান

#lutfor_hasan

39 - 8

Lutfor Hasan
Posted 1 year ago

আমার জীবনের একটা বিরাট জায়গা দখল করে আছে ‘চায়না ফনিক্স’। যতদূর জানি, এর সঠিক উচ্চারণ ফিনিক্স। ফিনিক্স শব্দকেই কি আমরা ফনিক্স বলতাম? জানি না। তবে, আমার মনে আছে সেই সাইকেলের বিভিন্ন জায়গায় একটা ফিনিক্স পাখির ঠোঁটের ছবি যুক্ত ছিল। আমরা ফনিক্স শুনতে শুনতে ফনিক্স বলেই জানতাম। ১৯৯২/৯৩ সালে সেই সাইকেলের মূল্য ছিল সাড়ে চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। ত্রিশ বছর আগের পাঁচ হাজার টাকার বর্তমান মূল্য লাখ টাকার কাছাকাছি কি না, কে জানে!

আমাদের সেই সাইকেল ক্রয় করা ছিল বর্তমানের ছেলেমেয়েদের লেটেস্ট ফোন ক্রয়ের আনন্দের দ্বিগুণ। সাইকেল আমাদের প্রাত্যহিক প্রয়োজনের চেয়ে আবেগের সঙ্গে অধিক যুক্ত ছিল। আমি শুরুতে আব্বার কিনে দেয়া একটা নীল রং হিরো সাইকেল চালাতাম। মন খারাপ থাকতো। কেননা, আমার সাইকেলটা ছিল মোটামুটি ভাঙাচোরা। ঝালাই ছিল অনেকগুলো। বন্ধুরা সকলেই নতুন ফনিক্স চালাতো। আমি সেই ভাঙাচোরা সাইকেল চালাতাম। মুখ ফুটে কিছু বলতে পারতাম না। আমার ছোটো যে ভাই, তাকে প্রথম ফনিক্স সাইকেল কিনে দেয়া হয়। ফলে আমার ভাগেরটা আরও পিছিয়ে যায়। অবশেষে আম্মা নিজের গয়না বিক্রি করে আমাকে কিনে দেন স্বপ্নের চায়না ফনিক্স।

আমাদের কালো রং সাইকেলের মাডগার্ডের একাংশ ছিল সাদা রং। সেই সাদা অংশে মোটা লাল কালিতে আমরা আমাদের নাম ও গ্রামের নাম লিখিয়ে আনতাম পেইন্টারের কাছ থেকে। ফলে শহরে বা যেকোনো জায়গায় কেউ সাইকেলে যেতেই তার নাম ও তার গ্রামের নাম আমাদের জানা হয়ে যেতো। এই কারণে কয়েক হাজার মানুষের নাম আমাদের মুখস্থ হয়ে যায়। এমনিতেই গ্রামের মানুষেরা জন্মের পরেই কয়েক হাজার মানুষের নাম জেনে যায়, এটা আরেক বিস্ময়। তো, আমাদের সাইকেলের পেছনে নাম ও গ্রামের উল্লেখ করার একটা বিপদের দিকও ছিল। আমরা ছিলাম সিনেমার পোকা। প্রতি সপ্তাহে গোপালপুরে কাকলি ও মানসী, মধুপুরে কল্লোল, মাধবী, সাথী, ভুয়াপুরে কাজল-রেখা, ঘাটাইলে জনতা ও গ্যারিসন সিনেমা হলে নিয়ম করে সিনেমা দেখতাম। সেখানে যেতাম সাইকেল চালিয়ে। মনে আছে, সিনেমা হলের সাথে সাইকেল রাখার জায়গা ছিল। সেখানে এক টাকার বিনিময়ে সাইকেল রাখতাম। ফলে আমরা যারা মর্নিং শো’তে সিনেমা দেখতে যেতাম, দুপুরের শো দেখতে এসে অনেকেই আমাদের খবর জেনে যেতো। বদ বন্ধুরা সেই নিয়ে ব্ল্যাকমেইল করতো। তাদেরকে সিনেমা না দেখালে আব্বাকে বলে দেবে বলে হুমকি দিতো।

সাইকেল নিয়ে স্মৃতি আছে হাজারে হাজার। একবার সামনের সাইকেলে যাচ্ছেন আব্বা। পেছনের সাইকেলে আমি। ইট বিছানো রাস্তা। উল্টো দিক থেকে ভ্যানভরতি সুন্দরী। চারটা সুন্দরী খিলখিল করে হাসছে। আমি ঘাড় ঘুরিয়ে দেখতে গিয়ে ধাক্কা খেলাম এক গাছের সাথে। আব্বা থামলেন। কাছে এসে দিলেন থাপ্পড়। এই বয়সে এত মেয়ে লোক দেখার শখ ক্যান তোর? আমি আর করব না এমন, এই বলে রক্ষা পেলাম।

সাইকেলের সবচেয়ে বড়ো ভ্রমণ ছিল সালমান শাহের আনন্দ অশ্রুর শুটিং দেখার সময়। সারাদিন তাদের শুটিং দেখতাম আর পেছনে পেছনে সাইকেল দৌড়ে যেতাম। বেশ ভালো ধকল গিয়েছিল সে সময়।

সাইকেল চালিয়ে প্রেমের প্রচেষ্টায় সবচেয়ে বেশি শক্তি ক্ষয় হয়েছে। যখন যাদের পেছনে আমরা ঘুরেছি, আমাদের বাহন ছিল সাইকেল। তাকে দেখতে যেতাম। ‘না’ শব্দ শুনে মানে প্রত্যাখ্যাত হয়ে কতবার ফিরে আসলাম। সেসব কত দগদগে স্মৃতি। ওরা কি আজ ভালো আছে? কী জানি!

তবে সাইকেল নিয়ে আবেগ আছে আমার। কামড়ে ধরা আবেগ। ছোটবেলায় আব্বা আমাকে সাইকেলের পেছনে বসিয়ে কত জায়গায় গিয়েছেন। আর বড়ো হয়ে আব্বাকে পেছনে চড়িয়ে আমি কতবার থানা শহরে গেলাম, আসলাম। আব্বা আমাকে পেছনে ধরে বসে থাকতেন। আব্বার সঙ্গে সাইকেলের সেই স্মৃতিটাই জীবনের অন্যতম স্মৃতি হয়ে আছে।

(বিশ্ব সাইকেল দিবস আজ৷ এই ছবিটাই সম্ভবত আমার সাইকেলবেলার একমাত্র ছবি। ছবির বয়স ২৮)

#লুৎফর_হাসান

53 - 2

Lutfor Hasan
Posted 1 year ago

তোমার শিশুতোষ পিঠের মতো

মসৃণ চাঁদ লেপ্টে আছে আকাশের বুকে

যেন কবেকার এক পিপাসায় ছটফটানো ঘুঘু

ডানা ঝাপটে পড়ে আছে নবগ্রামের আহত উঠোনে।

তুমি কবে কোনকালে মেখেছিলে পিঠে চাঁদের লোশন,

তোমার ত্বকের কথা ভাবতেই আমার খালি

আকাশ হবার লোভ জাগে আর মানবজনম বৃথা মনে হয়,

নাকি তুমি নিজেই চাঁদ আর আমি বুভুক্ষু আকাশ

পৃথিবীর মানুষ ভুল করে আমাদের স্বজাতি ভাবে!

অথবা এমনও হতে পারে

তুমি চাঁদ নও আর আমিও আকাশ নই

তুমি আমার গ্রামের বাড়ির আশ্রয়ের উঠোন

আর আমি এক ক্ষুধার্ত ঘুঘু

চারটা ভাত ছিটাতে দেখে তোমার কাছে এসেছিলাম।

তুমি আমাকে ঘরে নিতে পারো না

তুমি আমাকে লোকসম্মুখে নিতে পারো না বুকে

বড়জোর চারটা ভাত ছিটিয়ে রাখতে পারো

বড়জোর আশ্রয়ের নামে নিজেও থাকো
বিপুল হাহাকারে যেন কেউ দেখে স্পষ্ট বুঝে নেয় –

আমাদের মধ্যে নেই জন্মান্তরের সম্পর্ক

আমরা চিরকাল একটা সীমারেখা মেপে চলছি

আমাদের দীর্ঘশ্বাস জুড়ে যত্নে শুয়ে আছে
আকাশ ও চাঁদের মতো মিথ্যে এক নির্মম সংসার !

#লুৎফর_হাসান

#lutfor_hasan

31 - 4

Lutfor Hasan
Posted 1 year ago

তোমার মুখের দিকে তাকিয়ে মনে হলো
তুমি মুখ ফিরিয়ে আছো দীর্ঘ সময়,
অথচ আমার মনে পড়ছে না
কখন তোমাকে দুঃখ দিয়েছি।

এই যে আমার মনে পড়ছে না
এটাকেই তুমি দুঃখ ভেবে নিলে কি না,
তুমি আর এদিকে ফিরলেই না
তাই ভেবেই নিয়েছি আমার হয়তো
মন বলে কিছু নেই, মনে থাকবে কীভাবে !

তোমার মনে কি জমেছে পুরনো বিষাদ
যার লতাপাতার সঙ্গেও নেই আমার জানাশোনা,
আমাকে তুমি একটি বিরাট বৃক্ষ ভেবে
তার উপর রাখতে চেয়েছিলে ওসব পরগাছা,
আমি তো নিজেই এক টবের গাছ
অতদূর শেকড় পাব কোথায় যে
তোমার বিষাদের লতাপাতা জড়িয়ে থাকবে আমাতে,
আর তুমি দেবে আজন্মের নির্ভার ঘুম।

তোমাকে ঘুমোতে দিতে পারিনি বলে
তুমি জেগে আছো অন্য এক ক্ষুদ্র জানালায়
তোমার চোখ খুঁজছে দূরের বিস্তৃত আকাশ
আর আমি আকাশ হবো দূরের বিষয়
বেদনা ছাড়া সামান্য নীলরঙই তো চিনি না আমি।

তবে তুমি মন খারাপ করেই থাকো
কেননা পৃথিবীর সবার মন খারাপ করতেই
প্রতিদিন নিয়ম করে আসে সন্ধ্যেকাল,
রাত গভীর হলে একটু ঝুঁকে এসে বলে যেও
‘রাগ করিনি তো, ওদিকে তোমাকেই দেখছিলাম’।

#লুৎফর_হাসান
একত্রিশ মে, তেইশ।
নিকেতন, ঢাকা।

#lutfor_hasan

63 - 6

Lutfor Hasan
Posted 1 year ago

তোমাকে দেখলেই বেড়ে যায় সংসারের লোভ
এই ধরো, ঘুম ভাঙতেই শুভ সকালের পর
তোমাকে জিজ্ঞেস করি ‘কী করো’
তুমি দিলে নির্ভার উত্তর ‘ও বেরিয়ে যাবে
খাবার সাজিয়ে দিচ্ছি, খেতে ওর মনে থাকে না’।
আমি তখন আহত জানালার পর্দা সরিয়ে
পোড়াচ্ছি এক জনমের নিকোটিন
ওড়াচ্ছি দুঃখলিপির জমানো ধোঁয়া
বুকের ভেতর বাড়াচ্ছি ব্যথা গ্যাস্ট্রিকের,
তখনও আমার মনে নেই নাশতার টেবিলে
কী কী থাকার কথা ছিল কী কী নেই!
তবুও তোমাকে দেখলেই বেড়ে যায় সংসারের লোভ।
তুমি যখন স্নানে যাবে কিংবা খেতে বসবে বেলা করে
তখনই তোমার কাছে উড়ে আসবে যত্নের টেলিফোন
দেরি করে স্নান সারলে চুল শুকাবে না, ঠাণ্ডা লাগবে
দেরি করে ভাত খেলে দুর্বল হবে তুমি, মনে করিয়ে দেবে সব।
আমি তখন রেডিমেড লাঞ্চবক্সের দিকে তাকিয়ে ভাবছি
আজ না খেলেই কি তেমন কোনও ক্ষতি হবে পৃথিবীর!
একবারও চুমু না খেয়ে আমার ঠোঁট তো জেগে আছে
কথা বলছে ঠিকঠাক, ভুল হচ্ছে না বাক্যালাপে,
যা কিছু খেতে হয় বেঁচে থাকতে, খাই না তার অনেককিছুই।
তবুও তোমাকে দেখলেই বেড়ে যায় সংসারের লোভ ।
ধরো কোনোদিন তোমার মন খারাপ
চোখ তুলে তাকাচ্ছো না, দেখছো না সুন্দর
তখনই তোমার ঘর ভরে যাবে উপঢৌকনে
নীল শাড়ি আসবে অপরাজিতা ফুলের মতন
প্রজাপতির মতো দেখতে একটা চুলের ক্লিপ
ভোমরের মতো তোমার কাঁধের কাছে নিঃশ্বাস
তুমি দেবে সম্মতি আর তখনই একটা সমুদ্র
সুখের জলোচ্ছ্বাস তোমার বদ্ধ ঘরে,
আমি তখন ছেঁড়া স্যান্ডেল আর রঙচটা প্যান্টের
অবিচ্ছেদ্য পোস্টার ভবঘুরের, এই কাঙাল শহরে।
তাই তোমাকে দেখলেই বেড়ে যায় সংসারের লোভ ।
এসেছো যেপথেই ভিন্ন পন্থায়, ঘুমাতে যাবে তো একত্রে
সে যদি হয় চিরনিদ্রা- শিউলি ফুলে ঢাকা মমতার কবরে।
তোমার সঙ্গে চাদর-বালিশের ভাগাভাগি নয়
কেবল স্বর্গের দিকে যেতে চাই বলে
তোমাকে দেখলেই বেড়ে যায় সংসারের লোভ ।
#লুৎফর_হাসান
ত্রিশ মে, তেইশ।
নিকেতন, ঢাকা।

#lutforhasan
#লুৎফরহাসান

48 - 7

Lutfor Hasan
Posted 2 years ago

১৭ ফেব্রুয়ারি আসছে...

45 - 4

Lutfor Hasan
Posted 2 years ago

আসছে ১৭ ফেব্রুয়ারি

20 - 0

Lutfor Hasan
Posted 2 years ago

শেষ ট্রেন চলে গেছে

3 - 2

Welcoem to posts!!

Lutfor Hasan Posted 1 year ago

Lutfor Hasan Posted 1 year ago

Lutfor Hasan Posted 1 year ago

Lutfor Hasan Posted 1 year ago

Lutfor Hasan Posted 1 year ago

Lutfor Hasan Posted 1 year ago

Lutfor Hasan Posted 1 year ago

Lutfor Hasan Posted 2 years ago

Lutfor Hasan Posted 2 years ago

Lutfor Hasan Posted 2 years ago

Lutfor Hasan
Posted 1 year ago

Lutfor Hasan
Posted 1 year ago

Lutfor Hasan
Posted 1 year ago

Lutfor Hasan
Posted 1 year ago

Lutfor Hasan
Posted 1 year ago

Lutfor Hasan
Posted 1 year ago

Lutfor Hasan
Posted 1 year ago

Lutfor Hasan
Posted 2 years ago

Lutfor Hasan
Posted 2 years ago

Lutfor Hasan
Posted 2 years ago